কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত | কক্সবাজার ভ্রমণের সংক্ষিপ্ত গাইড

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (Coxsbazar Sea Beach) নিয়ে কথা বলতেই প্রথমে মাথায় আসে এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। ১২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অখণ্ড এ সাগর সৈকত দেশী বিদেশি পর্যটকদের উত্তাল ঢেউ এবং মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্থের মায়াজালে আবদ্ধ করে রাখে। চলুন জেনে নেই কক্সবাজার ভ্রমণ পরিকল্পনা, যাবার উপায়, থাকবেন কোথায়, কোথায় খাবেন সহ কক্সবাজার ভ্রমণের সকল টুকিটাকি বিষয়।

কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সাধারণত কক্সবাজার ভ্রমণের জন্যে সবাই শীতকালকেই বেছে নেন। কিন্তু কক্সবাজার এমন একটি জায়গা যেখানে বছরের যে কোন সময়ই আপনি বেড়াতে পারবেন। সময়ে সময়ে প্রকৃতি বদলায়, প্রকৃতির সেই রূপের প্রভাব থাকে কক্সবাজারেও।

তাই ভিন্ন স্বাদ নিতে ঝুম বর্ষায় বা শরতের নীল আকাশের সাথে মিতালির জন্যে চলে যেতে পারেন কক্সবাজার, অথবা হেমন্তের এক পূর্ণিমার রাতে কক্সবাজারের রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবে অবশ্যই। আর হ্যাঁ শীতকাল ছাড়া অন্য সময় গেলে কিন্তু একটা সুবিধা পাবেন। হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুতেই তুলনামূলক দাম কমে পাবেন।

কিভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে কক্সবাজার সড়ক, রেল এবং আকাশপথে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসগুলোর মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শ্রেণী ভেদে বাসগুলোর প্রতি সীটের ভাড়া ১,১০০ টাকা থেকে ২,৭০০ টাকা পর্যন্ত।

ঢাকা থেকে ট্রেনে সরাসরি কক্সবাজার যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে কক্সবাজার এক্সপ্রেস অথবা পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে করে কক্সবাজার যেতে পারবেন। আবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ট্রেনে গিয়ে সেখান থেকে বাসে করেও কক্সবাজার যেতে পারবেন। ঢাকার কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলস্টেশান হতে সোনার বাংলা, সুবর্ন এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী ও চট্টলা মেইল ট্রেইনে

চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। এরপর চট্টগ্রামের নতুন ব্রিজ এলাকা অথবা দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে এস আলম, হানিফ, ইউনিক ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণ ও মানের বাস পাবেন। বাস ভেদে ভাড়া নন এসি ৪২০ টাকা থেকে ৭২০ টাকা ও এসি বাসের ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে চাইলে রিজার্ভ মাইক্রোবাসেও কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমান ভাড়া ৪,৫৯৯ থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কোথায় থাকবেন

কক্সবাজারের হোটেলগুলো বর্তমান ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১৫০,০০০ জন। তাই অফ সিজনে বুকিং না দিয়ে গেলেও হোটেলে রুম পাবার নিশ্চয়তা থাকে কিন্তু ডিসেম্বরের ১৫ থেকে জানুয়ারী ১৫ তারিখ পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং দিয়ে যাওয়াই শ্রেয়। সাধারণত দামানুসারে কক্সবাজার হোটেল/মোটেল/রিসোের্ট গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

যত দূরে হবে থাকার ভাড়া সাধারণত কম হয়ে থাকে। হোটেল খোঁজার ক্ষেত্রে রিকশাওয়ালা বা সিএনজিওয়ালার পরামর্শে নেয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে হোটেলের ফেইসবুক পেইজ বা ওয়েবাসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।

আপনি যদি আপনার পরিবার নিয়ে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে চান তবে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে পারেন। এসি/নন এসির ২/৩/৪ বেড রুম ও রান্নাঘর বিশিষ্ট ফ্ল্যাটের প্রতিদিন ভাড়া হতে পারে ২,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা। এছাড়াও নিজের সাধ্য ও পছন্দমত একটা ঠিকানা পেতে আপনাকে তো একটু খোঁজাখুঁজি করতে হতেই পারে।

বিচ ভিউ / সী ভিউ হোটেল: বর্তমানে অনেক গুলো হোটেল ও রিসোর্ট আছে যে গুলোর রুম থেকে সুন্দর সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। অনেকেই এমন হোটেলের খোঁজ করেন যেখান থেকে সমুদ্র খুব কাছে। তবে এই রকম বিচ ভিউ হোটেল রুম গুলোর ভাড়া তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। আপনি কম দামে থাকতে চাইলে অফ সিজনে যেতে পারেন। বিচ ভিউ হোটেল ছাড়াও এমন কিছু হোটেল ও রিসোর্ট হলো হোটেল সাইমান, হোটেল সী ক্রাউন, প্রাসাদ প্যারাডাইস ও নীলিমা বিচ রিসোর্ট ইত্যাদি।

কি করবেন

সাগরের উত্তাল জলরাশি, ঝাউবনের সারি কিংবা তপ্ত বালির বিছানা দূর্ণিবার আকর্ষনে আপনাকে কাছে টেনে নেবেই। বেলাভূমিতে হাটা, সাগরের জলে রোদ্রস্নান আর সূর্যাস্থের নয়নাভিরাম দৃশ্য গুলো প্রতি মূহুর্তেই দেবে মানসিক প্রশান্তি। অবশ্যই সমুদ্রে নামার আগে সতর্ক থাকুন এবং জোয়ার-ভাটার সময় জেনে নিন। আপনার হাতে যদি সময় থাকে তবে সৈকতের পাশের বার্মিজ মার্কেট থেকে প্রিয়জনদের জন্য কিনে নিতে পারে স্মারক উপহার। আপনি যদি সমদ্রের পরো রূপ উপভোগ করতে চান

আপনি যদি সমুদ্রের পুরো রূপ উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সূর্যউদয় ও সূর্যাস্তের সময়টুকু বিচে কাটাবেন। ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় সমদ্র সৈকতের ভিন্ন রূপ দেখে আপনি নিশ্চিত বিমোহিত হবেন। পূর্ণিমার সময় গেলে অবশ্যই সন্ধ্যার পরের সময়টুকু সৈকতে কাটাতে পারেন।

সুন্দর মূহুর্তগুলোকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে শরণাপন্না হতে পারেন বিচ ফটোগ্রাফারদের। ১০০ থেকে ২৫০ টাকার বিনিময়ে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ের সাথে স্পীডবোটের রাইডে যেতে পারেন। বিকেলে আরো চাঙ্গা হতে বেরিয়ে আসতে পারেন ইনানী বীচ কিংবা হিমছড়ি ঝর্ণা থেকে। এছাড়াও আপনার সময় ও সুবিধানুযায়ী ঘুরে আসতে পারেন মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামুর বোদ্ধ মন্দির, টেকনাফ কিংবা সেন্টমার্টিন থেকে।

কোথায় খাবেন

কক্সবাজারে সব ধরণ ও মানের রেস্টুরেন্ট আছে। মধ্যম মানের বাজেট রেস্টুরেন্টের মধ্যে রোদেলা, ঝাউবন, ধানসিঁড়ি, পৌষি, নিরিবিলি ইত্যাদি উল্লেখ করার মত।সিজন অনুসারে অন্য অনেক কিছুর মত এখানে খাবারের দামও কম/বেশী হতে পারে।

ভাত: ২০-৪০ টাকা, মিক্সড

ভর্তা: ৭৫/১৫০/৩০০টাকা (৮-১০ আইটেম), লইট্যা ফ্রাই: ১০০-১২০টাকা (প্রতি প্লেট ৬-১০ টুকরা), কোরাল/ভেটকি: ১৫০ টাকা (প্রতি পিচ), গরু: ১৫০-২০০ টাকা (২ জন শেয়ার করতে পারবেন), রূপচাঁদা ফ্রাই/রান্না: ৩০০-৪০০ টাকা (বড়, ২জন খাওয়ার মত), ডাল:৩০-৬০ টাকা। এছাড়াও লাবনী পয়েন্ট সংলগ্ন হান্ডি রেস্তারা থেকে ২০০-২৫০ টাকায় হায়দ্রাবাদী বিরাণী চেখে দেখতে পারেন। আর কেওএফসি তো আছেই।

সতর্কতা ও ভ্রমণ টিপস

– যেকোন সমস্যায় টুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নিন। হটলাইন +০৮৮০১৭ ৬৯৬৯ ০৭৪০

–  কম খরচে কক্সবাজার ভ্রমণের জন্যে অফসিজনে বেড়াতে যান

– যেকোন কিছু কেনা ও যাতায়াতের ভাড়ার ক্ষেত্রে ঠিকমত দরদাম করুন

– কোন রেস্টুরেন্টে কিছু খাবার আগে দাম জিজ্ঞেস করুন

–  হোটেল ঠিক করার আগে হোটেল সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন

– জোয়ার-ভাটার সময় মেনে সাগরে নামুন

কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান

কক্সবাজার বেড়াতে গেলে শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, ঘুরে দেখবেন আশেপাশের আরও কিছু দর্শনীয় স্থান। আপনার সময় ও সুবিধা অনুযায়ী আগেই পরিকল্পনা করে নিতে পারেন কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবেন। আশেপাশে দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গুলো হলোঃ

– হিমছড়ি

– ইনানী সমুদ্র সৈকত

– মহেশখালী

–  রামু বৌদ্ধ বিহার

–  রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড

– সেন্টমার্টিন

Leave a Comment